corona-awarness

করোনাভাইরাস

করোনাভাইরাস, যার পোশাকি নাম কোভিড-১৯, সেই রোগটিকে এখন বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ভাইরাসটা কী?

করোনাভাইরাস হল একই শ্রেণীভুক্ত ভাইরাস যারা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখি আক্রান্ত করে। এটি এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস – যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায় নি। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। অথবা বলাযায় এটি এমন এক ভাইরাস, যা সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা লাগার মতোই প্রথমে আক্রমণ করে ফুসফুসে। এই ভাইরাস থেকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। যার থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি। নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: ‘চায়না ভাইরাস’, ‘করোনাভাইরাস’, ‘২০১৯ এনকভ’, ‘নতুন ভাইরাস’, ‘রহস্য ভাইরাস’ ইত্যাদি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

কোন প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস?

বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনাভাইরাস বহন করতে পারে (যেমন বেলুগা তিমি), করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে চীনের উহায়ের দক্ষিণ সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারের সঙ্গে। ওই বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও পাওয়া যেত, যেমন মুরগি, বাদুর, খরগোশ, সাপ- এসব প্রাণী করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে।

কোথা থেকে এলো করোনাভাইরাস?

গবেষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুরের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে চীনের উহায়ের দক্ষিণ সমুদ্রের খাবারের পাইকারি বাজারের সঙ্গে। গবেষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুরের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। একবার যদি ভাইরাসের উৎস প্রাণীটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে রোগটি মোকাবেলা করা অনেক সহজ হয়।

রোগের লক্ষ্মণ কী?

করোনাভাইরাসের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে। তবে এই লক্ষণগুলো খুবই সাধারণ। সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এটাকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ রোগীর লক্ষণ প্রকাশের আগে এই ভাইরাস ব্যক্তির শরীরে এ সময় পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।

এই ভাইরাসের পূর্ববর্তী লক্ষণগুলো হলো :-

  • সর্দি
  • গলা ব্যথা
  • কাশি
  • মাথা ব্যাথা
  • জ্বর
  • হাঁচি
  • অবসাদ
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  • বমি হওয়া
  • পেটের সমস্যা
  • অঙ্গ বিকল হওয়া
  • কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপরোক্ত সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকেনা।

তবে সাধারণত জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়।

কীভাবে ছড়ায়?

এই করোনাভাইরাস বিভিন্ন ভাবে মানুষের মাঝে ছড়াতে পারে:

  • এই ভাইরাস একজনের থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায়।
  • শারীরিক ঘনিষ্ঠতা এমনকি করমর্দন থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে।
  • রোগী জিনিস ধরার পর ভালো করে হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ, ও নাকে হাত দিলে এই রোগ ছড়াতে পারে।
  • হাঁচি-কাশি থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, একেকজন সংক্রমিত ব্যক্তি রোগটি গড়ে ১.৪ থেকে ২.৫ জন ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের টিকা বা ভ্যাকসিন:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাকসিনটি, বা এরকম যে আরো কয়েকটি টিকা এখন গবেষণার পর্যায়ে আছে – তাতে আদৌ কোন কাজ হবে কিনা তা জানতে আরো অনেক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। বিজ্ঞানীরা সারা পৃথিবীজুড়েই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন গবেষণার কাজ দ্রুততর করতে এই রোগ থেকে এখন পর্যন্ত রক্ষার একমাত্র উপায় হলো অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া।

যার মানে হলো:

  • মানুষজনের চলাচল সীমিত করে দেয়া।
  • হাত ধুতে সবাইকে সবাইকে উৎসাহিত করা।
  • স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে রোগীদের আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা সেবা দেয়া ।

রোগীদের ভাইরাস রয়েছে কিনা তা জানতে এবং রোগীদের সংস্পর্শে আসা লোকদের শনাক্ত করার জন্যও গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড বা নজরদারি ব্যবস্থার প্রয়োজন।

কোভিড-১৯ কি শিশুদের প্রভাবিত করে?

এটি একটি নতুন ধরনের ভাইরাস এবং ভাইরাসটি শিশু বা গর্ভবতী মায়েদের কীভাবে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। আমরা শুধু এটুকু জানি যে, যে কোন বয়সের মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমনের ঘটনা তুলনামূলকভাবে খুব কম ঘটেছে। এখন পর্যন্ত বয়স্ক ব্যক্তি এবং আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া খুব কম ক্ষেত্রেই এই ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

পরিবারের কোনও সদস্যের এই লক্ষণ দেখা দিলে কী করা উচিত?

আপনার বা আপনার সন্তানের যদি জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে এমন কোনও এলাকা যদি আপনি ভ্রমণ করে থাকেন, বা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে এমন কোনও এলাকা ভ্রমণ করেছে ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার লক্ষণ রয়েছে এমন কারও সাথে যদি আপনার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়, তবে আগে থেকেই স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর সাথে কথা বলুন।

মাস্ক পরে কি ঠেকানো যায়?

ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার যেকোনো খবরের জন্য একটি দারুণ প্রতীকী ছবি হচ্ছে মাস্ক বা মুখোশ পরা কোন মানুষের মুখচ্ছবি। বিশ্বের বহু দেশেই সংক্রমণ ঠেকানোর একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার। বিশেষ করে চীনে, যেখান থেকে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা, সেখানেও মানুষ বায়ুর দূষণের হাত থেকে বাঁচতে হরহামেশা নাক আর মুখ ঢাকা মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়। অবশ্য বায়ুবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক কতটা কার্যকর সে ব্যাপারে যথেষ্টই সংশয়ে আছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা, যাদেরকে বলা হয় ভাইরোলজিস্ট। তবে হাত থেকে মুখে সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক ব্যবহার করে সুফল পাওয়ার কিছু নজির আছে।

কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?

সংক্রমিত ব্যক্তিকে আলাদা করে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি পার হওয়া পর্যন্ত। মানুষজনকে অরক্ষিত প্রাণী থেকে সাবধানতার পাশাপাশি ডিম ও মাংস রান্না এবং ঠাণ্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

  • রোগী কাছ থেকে আসার পর ভালো করে হাত ধুতে হবে।
  • নাক-মুখ ঢেকে হাঁচুন, কাশুন।
  • ডিম, মাংস ভালো করে রান্না করুন। রোগীর থেকে দূরে থাকুন।
  • নিয়মিত হাত ধুয়ে পরিচ্ছন্ন রাখুন ওপরের প্রাথমিক লক্ষ্মণগুলো এক বা একাধিক দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কোথায় যোগাযোগ করবেন?

ই-মেইলের মাধ্যমেও আইইডিসিআরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ইমেইলের ঠিকানা: [email protected]

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর হটলাইন নম্বর: +8801401184551, +8801401184554, +8801401184555, +8801401184556, +8801401184559, +8801401184560, +8801401184563, +8801401184568, +8801927711784, +8801927711785, +8801937000011, +8801937110011

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর তথ্য: https://www.iedcr.gov.bd/

কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও সঠিক তথ্য (WHO): WHO guidelines:

(https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public/myth-busters)

করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে সাধারণ কিছু প্রশ্ন-উত্তর (WHO): WHO Q&A on coronavirus:

https://www.who.int/news-room/q-a-detail/q-a-coronaviruses

যোগাযোগ করতে পারেন:  ১৬২৬৩

সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অন্যতম উপায় কী?

ধাপ ১: প্রবাহমান পানিতে হাত ভেজানো;

ধাপ ২: ভেজা হাতে পর্যাপ্ত পরিমান সাবান ব্যবহার করা;

ধাপ ৩: হাতের পেছনের অংশ, আঙ্গুলের মধ্যের অংশ এবং নখের নিচের অংশসহ হাতের সব অংশই অন্ততপক্ষে ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা;

ধাপ ৪: প্রবাহমান পানিতে ভালভাবে কচলে হাত ধোয়া;

ধাপ ৫: একটি পরিষ্কার কাপড় বা এককভাবে ব্যবহার করেন এমন তোয়ালে দিয়ে হাত ভালোভাবে মুছে ফেলা।

আপনার হাত ঘন ঘন ধুবেন। বিশেষ করে, খাবার আগে, নাক পরিস্কার করার পর, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার পর এবং বাথরুমে যাওয়ার পরেও। সাবান ও পানি যদি সহজে পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে এমন অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। যদি হাতে ময়লা থাকে, তবে সব সময় সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।

করোনাভাইরাসে আমাদের করণীয়:

গত কয়েক সপ্তাহে ‘করোনা’ বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। চীনের পর এ  ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত ইউরোপের দেশগুলো। দিনকে দিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আমাদের মনে রাখতে হবে, সঠিক তথ্যের অভাবে ভুয়া সংবাদ, গুজব, অপপ্রচারের মতো বিষয়গুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এসব ছড়ানো মানুষ দুই ধরনের—অতি ধুরন্ধর ও অবোধ। আর সে কারণে ইতিমধ্যে সাধারণ মাস্ক, জীবাণুনাশক ইত্যাদি বাজার থেকে উধাও অথবা উধাও হওয়ার উপক্রম। ১৫ টাকার মাস্ক এখন ১৫০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকারকেই মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে নাগরিক হিসেবে আমাদের ও অনেক কিছু করার আছে। নিজের দেশকে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ব্যক্তিপর্যায়ে আমাদের নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে:

১. প্রথমত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজে আতঙ্কিত হবেন না, অন্যদের আতঙ্কিত করবেন না। অন্যরা আতঙ্কিত হয়, এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না। করোনায় আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে কখনোই যাবেন না। নিজে সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন করুন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। কী কী করতে হবে, তা ইতিমধ্যে আমরা সবাই জানি। আর পুনরাবৃত্তি করছি না।

২. প্রবাসী যাঁরা দেশে এসেছেন, তাঁরা দয়া করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করুন। আপনাকে যদি হোম কোয়ারেন্টিনে (বাসার ভেতরে একা থাকা, কারও কাছাকাছি না আসা, ইত্যাদি) থাকতে বলা হয়, তাহলে আপনার নিজের, মা–বাবা, সন্তানের, পরিবার-পরিজনের, সর্বোপরি দেশের স্বার্থে তা কঠোরভাবে পালন করুন। খামখেয়ালি আচরণ করে এদের সবার জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। দুই সপ্তাহ বাড়ির বাইরে না গেলে আপনি–আমি মরে যাব না। কিন্তু এর অন্যথা হলে আপনি–আমি নিজেও মরব এবং পরিবার-পরিজন সবাইকে মারব।

৩. জনসমাগমস্থল (বাজার-রেস্টুরেন্ট-উপসনালয়-জনসভা ইত্যাদি) যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। ধর্মীয় আচার-আচরণ নিজের বাড়িতে পালন করুন। অনেক ইসলামি রাষ্ট্র ও কিন্তু এখন মানুষকে মসজিদে যেতে নিষেধ করছে। কাবা শরিফের ছবিটা দেখুন। যেখানে মানুষের জন্য দিনরাত ২৪ ঘণ্টার কোনো সময়ই ঠিকমতো হাঁটা যেত না, সেখানে কর্তৃপক্ষ এখন মানুষের প্রবেশ সীমিত করে দিয়েছে। মন্দির-গির্জা ইত্যাদিতে যেতে ও মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

৪. মনে রাখবেন, এটা বেড়ানোর সময় নয়, মজা করার সময় নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে করোনার সংক্রমণ এড়ানোর জন্য, আপনাদের ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য নয়। তাই খুব প্রয়োজন না হলে দরকারি কাজেও কোথাও যাবেন না। এখন ঘুরতে যাওয়া রীতিমতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শামিল। কারও বাসায় দাওয়াত খেতে যাওয়ার অথবা কাউকে নিজের বাসায় দাওয়াত করার ও দরকার নেই। বাড়ির বাইরে বের হতে হলে সবার কাছ থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।

৫. কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা করোনার সতর্কতার বিধিবিধানগুলো কঠোরভাবে মেনে চলুন। আপনারা নিয়ম মানলে অন্যরা মানতে উৎসাহিত হবেন, আপনারা না মানলে অন্যরা মানবেন না। আপনারা সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করার কার্যক্রম গ্রহণ করুন। তবে অবশ্যই নিজেকে সুরক্ষিত করে।

৬. ঘরের দরজা-জানালা-গ্রিল দিয়ে অথবা বাইরে যেখানে–সেখানে থুতু ফেলবেন না। থুথু না ফেললে কিছু হয় না। উন্নত দেশে মানুষ কিন্তু বাইরে থুতু ফেলে না। খোলা মুখে হাঁচি-কাশি দেবেন না। বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন, বিশেষ করে যাঁরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তাই তাঁদের যত্ন বিশেষভাবে নিতে হবে।

৭. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন, ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফল খান। ব্যায়াম করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে করোনাভাইরাস খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না।

মনে রাখতে হবে, উন্নত বিশ্বে মানুষের সংখ্যা অনেক কম ও অনেক সুযোগ–সুবিধা থাকার পরও তারা কিন্তু অনেক সতর্ক অবস্থায় আছে। তারা করোনাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে। তাই আমাদের এই জনবহুল ও সুযোগ-সুবিধার অনেক অপ্রতুল দেশে আমাদেরকে উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। তাহলেই একমাত্র আমরা এই মহামারির সংক্রমণ ঠেকাতে সফল হলেও হতে পারি।

করোনা প্রতিরোধে যা খাবেন, যা খাবেন না:

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সারাবিশ্বে মহামারির আকার ধারণ করেছে। কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত না হওয়ায় আমাদের সচেতনতা ও শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিই এখন এই ভাইরাস মোকাবিলায় সর্বশেষ উপায়।

শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাঁচ ধরনের এগুলো হলো:

ভিটামিন-এ, সি, ই, বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়াম ইত্যাদি। এজন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ যে খাবারগুলো বেশি করে খেতে হবে যেমন—

শাকসবজি:
করলা (কোয়ারসেটিন, কেয়েমপফেরল, বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ), বাঁধাকপি, বিট, ব্রকোলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি,পালংশাকসহ সবুজ, বেগুনি, নীল, কমলা,ও হলুদ রঙের শাক-সবজি।

ফল:

লেবু, কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই, আনারস ইত্যাদি।

এছাড়া সিমের বিচি, মটরশুঁটি, বিচিজাতীয় খাবার, বার্লি, ওটস, লাল চাল ও আটা এবং বাদাম।

কোন খাবার কিভাবে শরীরের ক্ষমতা বাড়ায়:

শাক-সবজি, ফল ও বাদামজাতীয় খাবার শরীরে নিউটোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, যা স্টেপটোকোক্কাস নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সক্রিয় ভুমিকা রাখে।
আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ ইত্যাদিও রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
টক দই (প্রোবায়োটিক), এটি শ্বাসযন্ত্র ও গ্যাস্ট্রোইন্টেসটাইনাল সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে।
সবুজ চা (গ্রিন টি) ও ব্ল্যাক টিতে এল–থিয়ানিন ও ইজিসিজি নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে
ভিটামিন বি-৬, জিংক জাতীয় খাবার সামুদ্রিক খাবার ও দুধ ইত্যাদি বেশি খেতে হবে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খুব ভালো কাজ পেতে হলে শাকসবজি রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপে বা দীর্ঘ সময় রান্না না করে পরিমিত তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে।
এছাড়াও মধু, কালিজিরা, ঘি ও খেজুর রোগ প্রতিরোধে ভালো কাজ করে।

যা খাবেন না:

চিনি জাতীয় খাবার:
প্রসেসড ফুড ও কেমিক্যালযুক্ত খাবার কার্বনেটেড ড্রিংকস, বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, তামাক, ঠান্ডা খাবার, যেমন আইসক্রিম।

সঠিক পুষ্টির চাহিদা পুরণ করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে শুধু করোনা নয় আশাকরি সব ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করতে আমরা সক্ষম হতে পারবো।

তথ্য: ডা. জাহাঙ্গীর, শামসুন্নাহার নাহিদ (প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান,পুষ্টিবিভাগ, বারডেম হাসপাতাল

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট: ( ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, ইউনিসেফ, বিবিসি বাংলা, ব্র্যাক, প্রথম আলো, যুগান্তর, ও অন্যান্য মাধ্যম )

সংগ্রহ করেছেন: স্বাব্বীর সাহিন